বার্তা সম্পাদকঃ

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার ব্যস্ততম জনবহুল ও ঐতিহাসিক এলাকা হাজীরপাড়া-মৌলভীপাড়া সংলগ্ন সড়কটি বর্তমানে যেন এক চলমান ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। বাজারের প্রতিদিনকার ফেলে দেওয়া পচা তরকারি, দুর্গন্ধযুক্ত মাছ, মৃত পশুপাখি ও অন্যান্য আবর্জনায় পথচারীরা নাকাল। দুর্গন্ধে মুখ চেপে চলাফেরা করতেও কষ্ট হচ্ছে। এলাকার মানুষ বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে এই সড়কেই ময়লা ফেলার কারণে পুরো অঞ্চলটির পরিবেশ ভয়াবহভাবে দূষিত হয়ে উঠেছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রতিদিন এই রাস্তাটি ব্যবহার করেন প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ। এর মধ্যে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, চাকুরিজীবী, দোকানদার, মহিলা ও শিশুর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশে প্রতিদিন যাতায়াত করতে গিয়ে অনেকে স্বাস্থ্য সমস্যায়ও ভুগছেন। শ্বাসকষ্ট, এলার্জি, চোখ ও ত্বকে জ্বালাপোড়া, এমনকি হজমজনিত সমস্যারও উদ্ভব হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান।

পরিবেশবাদী ও রাজনৈতিক নেতা হেলাল উদ্দিন বলেন, এইভাবে অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রাস্তার পাশে প্রতিনিয়ত ময়লা ফেলা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে এটি পুরো এলাকার জন্য পরিবেশগত দুর্যোগ ডেকে আনতে পারে। শুধু মানবস্বাস্থ্য নয়, এই ময়লার কারণে মাটি, পানি ও বায়ু দূষণের মাধ্যমে কৃষি এবং জীববৈচিত্র্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এখনই প্রশাসন যদি কার্যকর উদ্যোগ না নেয়, তাহলে আগামী দিনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।

স্থানীয় উখিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী রুবিনা আক্তার জানায়, প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়েই স্কুলে যেতে হয়। ময়লার দুর্গন্ধে অনেক সময় বমি চলে আসে। পায়ে ময়লা লাগে, জুতা নষ্ট হয়। রাস্তা এতটা নোংরা যে হেঁটে যাওয়াটাই এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্থানীয় এনজিও কর্মী সালমা ইয়াসমিন সুমি বলেন, অফিসে যাওয়ার সময় সেজেগুজে বের হই, কিন্তু এই রাস্তা পার হতে হতে জামা কাপড় দুর্গন্ধে ভরে যায়। এটি শুধু একটি স্বাস্থ্যগত সমস্যা নয়, এটি নারীদের জন্যও এক ধরনের নিরাপত্তা ও সম্মানজনক পরিবেশের প্রশ্ন।

পল্লী চিকিৎসক আজিজি হক বলেন, আমার চেম্বারে প্রতিদিনই শিশু ও বয়স্কদের মাঝে শ্বাসকষ্ট, এলার্জি, বমিভাব, ত্বকের সমস্যা নিয়ে রোগী আসছে। এদের বেশিরভাগই হাজীরপাড়া-মৌলভীপাড়া রোড সংলগ্ন এলাকা থেকে আসছে। আমার ধারণা, এসব সমস্যার উৎস এই ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশ।

এলাকাবাসী বারবার অভিযোগ করেও কাজের কাজ কিছু হয়নি বলে দাবি করেছেন। তারা উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এবং রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিতভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তাদের দাবি:

*দ্রুত বিকল্পভাবে ময়লা ফেলার স্থান নির্ধারণ করা হোক

*বাজার এলাকায় ময়লা ব্যবস্থাপনার জন্য নির্দিষ্ট পয়েন্ট এবং ডাস্টবিন স্থাপন করা হোক

*ময়লা পরিষ্কারে সুনির্দিষ্ট মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা হোক

*নিয়মিত সড়ক পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালিত হোক

জনস্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সক্রিয় মনোযোগ ছাড়া এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। না হলে, অদূর ভবিষ্যতে হাজীরপাড়া-মৌলভীপাড়া সড়ক কেবল দুর্গন্ধযুক্ত নয়, স্বাস্থ্যবিধির চরম লঙ্ঘনের প্রতীকে পরিণত হবে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।