শাকুর মাহমুদ চৌধুরী, উখিয়াঃ

কক্সবাজারের উখিয়ায় কাঁচা তরিতরকারির বাজারে ভয়াবহ অস্থিরতা বিরাজ করছে। প্রতিদিনই শাকসবজি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম একাধিকবার পরিবর্তিত হচ্ছে। কোথাও কোথাও এক কেজি সবজির দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। ফলে সাধারণ ভোক্তারা পড়েছেন চরম বিপাকে। বিশৃঙ্খল বাজার পরিস্থিতি রীতিমতো জনদুর্ভোগে রূপ নিয়েছে।

উখিয়া সদরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেগুন, আলু, ঝিঙা, তিত করলা, কাঁকরল, কাঁচা মরিচ, বরবটি, মিষ্টি কুমড়া, শসা, গাজর ও টমেটোসহ প্রায় সব ধরনের সবজির দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এক সপ্তাহ আগে ৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া টমেটো এখন ৯০-১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বরবটি, ঝিঙা ও করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে— যা এক মাস আগেও ছিল ৪০-৫০ টাকার মধ্যে।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো—এই দাম বৃদ্ধির পেছনে নেই কোনো প্রকৃত যৌক্তিক কারণ। নেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা উৎপাদন ঘাটতির কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য। বরং খুচরা ব্যবসায়ীদের ইচ্ছামতো দাম নির্ধারণের কারণে বাজারে চলছে চরম নৈরাজ্য। প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের ঘাটতি, নিয়মিত মনিটরিংয়ের অভাব এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণে বাজার ব্যবস্থাপনায় ভেঙে পড়েছে শৃঙ্খলা।

সাধারণ ভোক্তারা জানাচ্ছেন তাদের হতাশা আর ক্ষোভ। উখিয়া সদরের বাসিন্দা মো. সেলিম বলেন, প্রতিদিন বাজারে গিয়ে দেখি একেকদিন একেকরকম দাম। যে টমেটো এক সপ্তাহ আগে ৬০ টাকায় পেয়েছিলাম, এখন সেটা ১০০ টাকা! মনে হয়, ব্যবসায়ীরা নিজেদের মতো করে লুটপাট চালাচ্ছে।

স্থানীয় একটি এনজিও সংস্থার কর্মী নাবিলা সুলতানা আরজু জানান, পরিকল্পিতভাবে বাজারে কেনাকাটা করা এখন দুঃস্বপ্ন। প্রতিদিনই দাম বদলায়। একটা দিন ঝিঙা ৫০ টাকা, পরদিন ৮০ টাকা! এটা কেমন বাজার ব্যবস্থা?


এমন দামের হেরফেরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষজন। গৃহিণী, দিনমজুর, রিকশাচালক, কৃষক— সকলেই বিপর্যস্ত। অনেকের মতে, এখন সবজি কিনতে গেলেই মনে হয় যেন মাংস কিনছি!

বাজারের একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বললে তারা দামের পেছনে দায় দিচ্ছেন ট্রাকভাড়া বৃদ্ধি এবং পাইকারি বাজারে ওঠানামাকে। তবে অনেকে স্বীকারও করেছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এই পরিস্থিতিকে সুযোগ হিসেবে নিচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিক্রেতা বলেন, মল্যবৃদ্ধির পেছনে সব সময়ই আমরা দায়ী থাকি বলা হয়। কিন্তু ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে যে চড়া ট্রাকভাড়ায় পণ্য আনতে হয়, সেটাও একটা বড় কারণ। তবুও স্বীকার করছি, খুচরা পর্যায়ে অনেকে নিজের মতো দাম বাড়িয়ে ফেলে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, বাজারে নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাজার মনিটরিং টিমকে সক্রিয় করা হবে। কেউ যদি অনিয়ম করে, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এই মূল্যবৃদ্ধির পেছনে মূলত চারটি কারণ কাজ করছে: ১. বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ২. অসাধু ব্যবসায়ীদের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ৩. পরিবহনে অতিরিক্ত চাঁদাবাজি ৪. এবং বাজার মনিটরিং ব্যবস্থার ঘাটতি।

স্থানীয় ভোক্তারা বলছেন, শুধু তদারকি নয়, প্রয়োজন কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ। প্রতিটি বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, নির্ধারিত মূল্য তালিকা সাঁটানো এবং প্রতিনিয়ত হাটবাজার পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা না নিলে সাধারণ মানুষের জীবনে দুর্ভোগ আরও বাড়বে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে যে পদক্ষেপগুলো অবিলম্বে গ্রহণ জরুরি:

প্রতিটি হাটবাজারে সরকারি নির্ধারিত মূল্য তালিকা টাঙানো বাধ্যতামূলক করা

প্রতিদিন বাজার মনিটরিং করে প্রতিবেদন তৈরি অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান

পাইকারি পর্যায়ে সরবরাহ ও পরিবহনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত

এবং স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি ব্যবসায়ী সংগঠনের মধ্যে সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ।

অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থাপনায় নৈরাজ্য যতদিন থাকবে, ততদিন সাধারণ মানুষের হাহাকার থামবে না। বাজারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এখনই প্রয়োজন কঠোর উদ্যোগ, নয়তো উখিয়াবাসীর কষ্ট আর সীমায় থাকবে না।